তাওবাদী দার্শনিক ভাবনা: জীবন বদলে দেওয়া ৫টি আশ্চর্য দিক

webmaster

도교와 철학적 사유 - **Prompt for Inner Peace and Nature:**
    "A serene, realistic digital painting of a person (gender...

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি ভালোই আছেন। আমি জানি, আমাদের এই ব্যস্ত জীবনে একটু থমকে দাঁড়িয়ে নিজেকে নিয়ে ভাবার সময় প্রায় কারোই হয় না। চারিদিকে এত কোলাহল, এত প্রতিযোগিতা, যে আমরা প্রায়ই ভুলে যাই আসল শান্তিটা আসলে কোথায়। কিন্তু জানেন কি, আমাদের পূর্বপুরুষরা শত শত বছর আগে থেকেই এই শান্তির খোঁজে মগ্ন ছিলেন?

도교와 철학적 사유 관련 이미지 1

বিশেষ করে তাওবাদের মতো প্রাচীন দর্শনগুলো আমাদের জীবনের জটিলতার গভীরে প্রবেশ করে কিছু সহজ অথচ অসাধারণ সমাধান বাতলে দেয়।আমি নিজেও যখন খুব চাপে থাকি, তখন এই ধরনের দার্শনিক চিন্তাগুলো আমাকে নতুন করে ভাবতে শেখায়। মনে হয়, যেন হাজার বছরের পুরোনো কোনো বন্ধুর সাথে কথা বলছি, যে আমাকে প্রকৃতির সাথে মিশে যেতে, নিজের ভেতরকার অস্থিরতাকে শান্ত করতে শেখাচ্ছে। আজকাল আমাদের জীবনে মানসিক চাপ, অস্থিরতা আর একটা অজানা শূন্যতা যেন একটা নিত্যসঙ্গী। আধুনিকতার এই গতিময় সময়ে আমরা কীভাবে ভারসাম্য খুঁজে পাব, কীভাবে বাইরের কোলাহল থেকে নিজেকে মুক্ত করে ভেতরের শান্তিতে পৌঁছাব – এই প্রশ্নগুলো কিন্তু খুব জরুরি।বর্তমান সময়ে আমরা যখন প্রযুক্তি আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছি, তখন মানবিকতা আর আত্মার গভীরে ডুব দেওয়ার গুরুত্ব যেন আরও বেশি করে অনুভব করছি। তাই, এই প্রাচীন প্রজ্ঞাগুলো এখন আমাদের জন্য আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। নিজের জীবনটাকে আরও অর্থপূর্ণ, আরও শান্তিময় করে তুলতে চাইলে এই দার্শনিক চিন্তাগুলো আমাদের পথ দেখাতে পারে। আমার অভিজ্ঞতা বলে, এই ভাবনাগুলো শুধু বইয়ের পাতাতেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপে এর গভীর প্রভাব ফেলে। এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে হলে, নিচের লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন, আমি আপনাদের সবকিছু বিস্তারিতভাবে জানাতে চলেছি!

ভেতরের শান্তি খোঁজার নতুন দিগন্ত

আমার মনে হয়, জীবনের দৌড় প্রতিযোগিতায় আমরা এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছি যে নিজেদের ভেতরের খবর নেওয়ার সময়টুকুও পাই না। এই কোলাহল আর অস্থিরতার মাঝে দাঁড়িয়ে মাঝে মাঝে মনে হয়, একটু থমকে দাঁড়ানো দরকার, নিজেকে প্রশ্ন করা দরকার – আমি কি সত্যিই ভালো আছি?

এই প্রশ্নটার উত্তর খুঁজতে গিয়েই আমি প্রাচীন দর্শনগুলোর দিকে ঝুঁকেছি, আর আমার মনে হয়েছে, শত শত বছর আগের সেই প্রজ্ঞাগুলো আজও আমাদের জীবনে ঠিক ততটাই প্রাসঙ্গিক। যখন আমি খুব মানসিক চাপে ভুগি, তখন মনে হয় যেন এই পুরনো দিনের জ্ঞান আমাকে শান্ত করে। এসব দর্শন বলে যে, প্রকৃত সুখ বাইরের কোনো বস্তুগত প্রাপ্তিতে নেই, বরং তা নির্ভর করে ভেতরের প্রশান্তির ওপর – যা আসে আধ্যাত্মিক শান্তি থেকে। আমার অভিজ্ঞতা বলে, জিকির, দোয়া, কিংবা নীরবে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হৃদয়ে এক অদ্ভুত শান্তি নিয়ে আসে। আপনারা যখন মন খারাপ থাকে বা কোনো কারণে অস্থির লাগে, তখন একটু প্রকৃতির কাছাকাছি গিয়ে বসুন, দেখবেন মনটা কেমন হালকা হয়ে যায়। আমি নিজে যখন শহরের ঘিঞ্জি পরিবেশ থেকে বেরিয়ে একটু সবুজ মাঠে বা গাছের নিচে দাঁড়াই, তখন মনে হয় বুক ভরে শ্বাস নিতে পারছি। এই অনুভূতিটাই মানসিক চাপ কমাতে দারুণ কাজ করে।

আধুনিকতার ভিড়ে প্রাচীন প্রজ্ঞা

বর্তমান সময়ে যেখানে প্রযুক্তি আমাদের চারপাশ থেকে ঘিরে ধরেছে, সেখানে মনকে শান্ত রাখাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্মার্টফোনের স্ক্রিনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটানো বা সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের ঘুমের চক্রকে নষ্ট করছে। আমার নিজেরও এমনটা হয়েছে যে, গভীর রাতে ফোন দেখতে দেখতে কখন যে ঘুম উধাও হয়ে গেছে, টের পাইনি। কিন্তু সুস্থ থাকতে হলে পর্যাপ্ত ঘুম খুব জরুরি, আর এজন্য ঘুমানোর অন্তত দুই ঘণ্টা আগে সব ধরনের ডিভাইস থেকে দূরে থাকা উচিত। এছাড়াও, স্টোয়িক দার্শনিকদের মতো প্রাচীন প্রজ্ঞাও আমাদের শেখায় কীভাবে নিয়ন্ত্রণযোগ্য বিষয়গুলোতে মনোযোগ দিতে হয় এবং যা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই তা নিয়ে উদ্বিগ্ন না হতে হয়। আমার মনে হয়, এই ছোট ছোট পরিবর্তনগুলো আমাদের জীবনকে আরও সহজ আর শান্তিপূর্ণ করে তুলতে পারে। যেমন, আমি দেখেছি, যদি আমরা জীবনের ছোট ছোট নিয়ামতগুলোর জন্য কৃতজ্ঞ হতে শিখি, তাহলে আমাদের মন অনেক বেশি ইতিবাচক হয়ে ওঠে।

মানসিক চাপ কমানোর প্রাকৃতিক উপায়

মনের শান্তি যেন আজকাল একটা দুর্লভ জিনিস হয়ে গেছে, তাই না? আমি নিজেও দেখেছি, কাজের চাপ বা ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়েনে মন এতটাই ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে যে, মনে হয় যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে। কিন্তু এই সবকিছুর মাঝেও কিছু সহজ উপায় আছে, যা মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট ধ্যান করলে সারাদিনের ক্লান্তি অনেকটাই কমে যায়। আমি নিজে যখন মেডিটেশন করা শুরু করি, তখন প্রথম প্রথম খুব কঠিন লাগতো, মন স্থির হতো না। কিন্তু ধীরে ধীরে এটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে এবং এখন এটা আমার দৈনন্দিন জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। এছাড়াও, প্রকৃতির সাথে সময় কাটানো মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে দারুণ সহায়ক। প্রতিদিন অন্তত ২০ মিনিট প্রকৃতির মাঝে হেঁটে আসা বা বসে থাকা মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী হরমোন কমাতে সাহায্য করে। আমি নিজেই যখন সকালে পার্কে গিয়ে হাঁটি, তখন পাখির কিচিরমিচির আর সবুজ ঘাসের গন্ধ আমার মনকে সতেজ করে তোলে।

জীবনের গতিময়তায় ভারসাম্যের ছন্দ

আমাদের এই ছুটে চলা জীবনে কর্মজীবন আর ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে একটা সুন্দর ভারসাম্য রাখাটা কতটা জরুরি, সেটা আমরা সবাই কমবেশি বুঝি। কিন্তু এই কাজটা যে কতটা কঠিন, তা শুধুমাত্র একজন কর্মব্যস্ত মানুষই বুঝতে পারে। আমার অনেক বন্ধুকে দেখেছি, দিনের পর দিন কাজের চাপে নিজেদের পছন্দের কাজগুলোও ভুলে যায়, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো বা নিজের যত্ন নেওয়ার কথা ভাবারও সময় পায় না। এতে কি হয় জানেন?

একসময় মানসিক অবসাদ আর একঘেয়েমি তাদের ঘিরে ধরে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, কাজ আর ব্যক্তিগত জীবনকে আলাদা করে দেখা নয়, বরং দুটোকে সুন্দরভাবে মিলিয়ে একটা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করাটাই আসল বুদ্ধিমানের কাজ। এর জন্য কিছু সহজ অভ্যাস গড়ে তুলতে হয়। যেমন, কাজের সময়টা নির্দিষ্ট রাখা আর অবসর সময়ে শুধু নিজেকে বা পরিবারকে সময় দেওয়া। আমি নিজেও চেষ্টা করি অফিসের কাজ অফিসে শেষ করে আসার, যাতে বাসায় এসে পরিবারের সঙ্গে হাসিমুখে গল্প করতে পারি বা নিজের প্রিয় বইটা পড়তে পারি। আমার মনে হয়, এতে কাজের প্রতি মনোযোগও বাড়ে আর মানসিক শান্তিও বজায় থাকে।

সময়কে নিজের মতো করে সাজানো

আমরা প্রায়ই বলি, সময় পাই না! কিন্তু সত্যি বলতে কী, সময় আমরা নিজেদের মতো করে তৈরি করে নিতে পারি। আমার মনে হয়, প্রতিদিন কী কী কাজ করব, তার একটা ছোট তালিকা আগের রাতেই তৈরি করে রাখলে পরের দিন অনেক সুবিধা হয়। এতে অপ্রয়োজনীয় কাজ বাদ দেওয়া যায় আর গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া যায়। আমি নিজে দেখেছি, যখন আমার দিনের কাজগুলো আগে থেকেই সাজানো থাকে, তখন কাজগুলো শেষ করতেও সুবিধা হয় আর নিজের জন্য কিছুটা সময়ও বের করা যায়। আর হ্যাঁ, মাঝে মাঝে বিরতি নেওয়াটা খুব জরুরি। একটানা কাজ করলে মস্তিষ্কের ওপর চাপ পড়ে, তাই ছোট ছোট বিরতি মনকে সতেজ রাখে। এই বিরতির সময়টায় আমি হয়তো এক কাপ চা খাই বা বাইরে গিয়ে একটু হেঁটে আসি, এতে কাজের একঘেয়েমি দূর হয় আর নতুন উদ্যোম নিয়ে আবার কাজে ফেরা যায়।

শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার যোগসূত্র

শরীর যদি সুস্থ না থাকে, তাহলে মন ভালো থাকবে কীভাবে? এই কথাটা আমার সবসময় মনে হয়। স্বাস্থ্যকর খাওয়া-দাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম আর নিয়মিত শরীরচর্চা – এই তিনটি জিনিস আমাদের জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখার মূল মন্ত্র। যতই ব্যস্ততা থাকুক না কেন, শরীরকে অবহেলা করা একদমই ঠিক না। আমি প্রতিদিন সকালে হালকা ব্যায়াম করি বা কিছুক্ষণ হাঁটি। এতে আমার সারাদিনটা সতেজ থাকে আর মনটাও ফুরফুরে থাকে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে যেমন মন-মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, তেমনি পুষ্টিকর খাবার না খেলেও শরীরে শক্তি পাওয়া যায় না। আমি নিজে দেখেছি, যখন আমি নিয়মিত ঘুমাই আর পুষ্টিকর খাবার খাই, তখন আমার কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়ে আর মানসিক চাপও অনেকটাই কমে যায়। এছাড়াও, অন্যদের সাথে কথা বলা এবং নিজের অনুভূতিগুলো ভাগ করে নেওয়াও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Advertisement

প্রাচীন প্রজ্ঞার আলোয় আধুনিক জীবনের সমাধান

প্রাচীনকালে মানুষ জীবন ও জগতকে বোঝার জন্য দর্শনের আশ্রয় নিত, আর আজও সেই দার্শনিক চিন্তাগুলো আমাদের জীবনের জটিলতা নিরসনে সাহায্য করে। আমার মনে হয়, লাও ৎসু’র মতো প্রাচীন দার্শনিকের ‘তাও তে চিং’ গ্রন্থে যে জীবনদর্শনের কথা বলা হয়েছে, তা বর্তমান সময়েও ভীষণ প্রাসঙ্গিক। তাওবাদের মূল কথা হলো, জগতের স্বাভাবিক গতি, নিয়মিত বিবর্তন আর প্রাকৃতিক পরিণতির সাথে তাল মিলিয়ে চলা। এই দর্শন বলে যে, সবকিছুর মূলে একটা শক্তি বিদ্যমান থাকে, আর প্রকৃতির এই পথ বা ‘তাও’ মেনে চললেই জীবনে শান্তি আসে। আমি যখন প্রথম তাওবাদ নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি, তখন মনে হয়েছিল, এই ব্যস্ত দুনিয়ায় এত সরল জীবনযাপন কি সত্যিই সম্ভব?

কিন্তু পরে বুঝতে পারি, এর মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষ, প্রকৃতি আর জীবনের মধ্যে একটা গভীর সম্পর্ক তৈরি করা, যা আমাদের সুস্বাস্থ্য, সামাজিক ভারসাম্য আর আত্মোপলব্ধি অর্জনে সাহায্য করে।

প্রকৃতির সাথে একাত্ম হওয়ার শিল্প

আমরা শহরের জীবনে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছি যে, প্রকৃতির সাথে আমাদের সম্পর্কটা যেন অনেকটাই আলগা হয়ে গেছে। কিন্তু জানেন কি, প্রকৃতির সাথে একটু সময় কাটালেই আমাদের মন কতটা সতেজ হয়ে উঠতে পারে?

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটান, তাদের মনোযোগ অনেক বাড়ে আর মানসিক ক্লান্তিও কমে যায়। আমি নিজে দেখেছি, যখন আমার খুব অস্থির লাগে, তখন একটু গাছপালা বা নদীর ধারে গিয়ে দাঁড়ালে মনটা শান্ত হয়ে যায়। এটা যেন এক ধরনের নিরাময়। জাপানের ‘শিনরিন-ইয়োকু’ বা ‘বন স্নান’ বলে একটা ধারণা আছে, যেখানে বনের পরিবেশে নিজেকে ডুবিয়ে রেখে শিথিলতা আর সুস্থতা বাড়ানো হয়। এটা কেবল হাঁটাহাঁটি নয়, বরং প্রকৃতির শব্দ, গন্ধ আর স্পর্শকে অনুভব করা। আমার মনে হয়, এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলো আমাদের ভেতরের অস্থিরতাকে শান্ত করে এক অদ্ভুত শান্তি এনে দিতে পারে।

সম্পর্ক আর জীবনের গভীরতা

মানুষ সামাজিক জীব, আর সম্পর্কের জাল বুনেই আমাদের জীবন। কিন্তু আজকাল এই সম্পর্কের বাঁধনগুলোও যেন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। আমরা এতটাই আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছি যে, কাছের মানুষগুলোর সাথে মন খুলে কথা বলার সময়ও পাই না। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলে, বন্ধু, পরিবার বা প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটানো, তাদের কথা শোনা আর নিজের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করা মানসিক সুস্থতার জন্য খুবই জরুরি। আমি দেখেছি, যখন আমি আমার বন্ধুদের সাথে মনের কথা বলি, তখন মনটা হালকা হয়ে যায় আর মনে হয় যেন একটা বড় বোঝা নেমে গেল। মনোবিজ্ঞানীরাও বলেন, সামাজিক বন্ধন মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই চেষ্টা করুন প্রিয়জনদের সঙ্গে একটু বেশি সময় কাটাতে, তাদের সুখ-দুঃখের অংশীদার হতে। এতে আপনার জীবনটা আরও অর্থপূর্ণ হবে আর মানসিক শান্তিও আসবে।

মনের জানালা খুলে দেখার উপায়

মনের শান্তি কি কেবল ভাগ্যের ব্যাপার? আমার মনে হয় না। আসলে, মনের শান্তি অনেকটাই আমাদের নিজেদের হাতে। প্রতিদিনের ছোট ছোট অভ্যাস আর চিন্তাভাবনার পরিবর্তন আমাদের মনকে শান্ত আর সুখী করে তুলতে পারে। যেমন, কৃতজ্ঞতার চর্চা করা। আমরা প্রায়ই যা পাইনি, তা নিয়ে দুঃখ করি, কিন্তু যা আছে তার জন্য কৃতজ্ঞ হওয়াটা ভুলে যাই। আমার মনে আছে, একবার আমি একটা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন আমার এক বন্ধু আমাকে একটা ‘কৃতজ্ঞতা ডায়েরি’ লেখার পরামর্শ দিল। প্রথমে ভেবেছিলাম, এটা আবার কী!

কিন্তু যখন প্রতিদিন ঘুমানোর আগে দিনের ভালো ঘটনাগুলো লিখতাম, তখন মনে হতো, আরে, আমার জীবনে তো অনেক ভালো কিছুও ঘটছে! এতে করে নেতিবাচক চিন্তাগুলো ধীরে ধীরে কমে আসে আর মনটা ইতিবাচক হয়ে ওঠে।

Advertisement

ইতিবাচকতার বীজ বপন

আমাদের মনটা যেন একটা বাগান, আমরা যে বীজ বপন করি সেটাই ফলে। যদি নেতিবাচক চিন্তা আর হতাশার বীজ বুনি, তাহলে জীবনেও নেতিবাচকতাই ভরে ওঠে। আর যদি ইতিবাচকতার বীজ বপন করি, তাহলে জীবনটা ফুলে ফলে ভরে ওঠে। আমার কাছে মনে হয়, ভালো দিকগুলোকে কেন্দ্র করে বাঁচাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। হয়তো বন্ধুর একটা ছোট্ট সাহায্য, বা প্রকৃতির সুন্দর কোনো দৃশ্য, কিংবা নিজের করা একটা ভালো কাজ – এই ছোট ছোট ইতিবাচকতাগুলো আমাদের মনকে আলোকিত করে। আমি নিজে চেষ্টা করি প্রতিদিন অন্তত একটা ভালো কাজের কথা মনে রাখতে বা একটা সুন্দর মুহূর্তকে উপভোগ করতে। এতে আমার মানসিক শক্তি বাড়ে আর নিজেকে অনেক বেশি সতেজ লাগে। নেতিবাচক চিন্তা পরিহার করে ইতিবাচক দিকে মনোযোগ দিলে মানসিক সুস্থতা বজায় থাকে।

নতুন কিছু শেখার আনন্দ

জীবনটা তো কেবল বেঁচে থাকা নয়, জীবন মানে প্রতিদিন নতুন কিছু শেখা, নতুন কিছু আবিষ্কার করা। আর এই শেখার আনন্দটা আমাদের মনকে সতেজ আর প্রাণবন্ত রাখে। আমি নিজে দেখেছি, যখন আমি নতুন কোনো দক্ষতা অর্জন করি বা নতুন কোনো বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করি, তখন আমার আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়ে আর মনে হয় যেন জীবনটা আরও অর্থপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এটা হতে পারে নতুন কোনো ভাষা শেখা, ছবি আঁকা, গান গাওয়া বা কোনো বাদ্যযন্ত্র বাজানো। নিজের পছন্দের কাজটি করলে মানসিক চাপ কমে এবং মনোযোগ বৃদ্ধি পায়। এই ছোট ছোট শখের পেছনে সময় দিলে মনও ভালো থাকে আর নিজেকে অনেক বেশি পরিপূর্ণ মনে হয়।

সুখ খুঁজে পাওয়ার আসল ঠিকানা

আমরা সবাই সুখের পেছনে ছুটি, কিন্তু সুখের আসল ঠিকানাটা কোথায়, তা অনেকেই জানি না। আমার মনে হয়, সুখ কোনো দূরের গন্তব্য নয়, বরং এটা আমাদের প্রতিদিনের জীবনের ছোট ছোট মুহূর্তগুলোতে লুকিয়ে থাকে। আর এই সুখ খুঁজে পাওয়ার জন্য আমাদের চারপাশের পরিবেশ, আমাদের সম্পর্ক আর আমাদের ভেতরের জগত – সবকিছুর দিকেই মনোযোগ দিতে হবে। প্রাচীন দর্শনগুলো আমাদের এই পথের দিশা দেখায়। তারা বলে, প্রকৃতি, সম্পর্ক আর আত্মিক শান্তি – এই তিনটির মধ্যেই সত্যিকারের সুখের বীজ লুকিয়ে আছে। আমি নিজে দেখেছি, যখন আমি প্রকৃতির কাছাকাছি থাকি, প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটাই আর নিজের মনের যত্ন নিই, তখন জীবনটা অনেক বেশি সুন্দর আর শান্তিময় হয়ে ওঠে।

জীবনের ছোট ছোট আনন্দ

আমাদের জীবনটা যেন একটা বিশাল ক্যানভাস, আর এই ক্যানভাসে আমরা প্রতিদিন নতুন নতুন ছবি আঁকি। এই ছবিগুলোতে যেন কেবল বড় বড় সাফল্য আর প্রাপ্তিই থাকে না, বরং জীবনের ছোট ছোট আনন্দগুলোও থাকে। এক কাপ গরম চা, প্রিয়জনের হাসিমাখা মুখ, মেঘে ঢাকা আকাশ দেখা – এই সবকিছুই কিন্তু আমাদের সুখের অংশ। আমার মনে আছে, একবার বৃষ্টির দিনে আমি বারান্দায় বসে চা খাচ্ছিলাম আর বই পড়ছিলাম, তখন মনে হয়েছিল, এর চেয়ে সুন্দর আর কী হতে পারে!

도교와 철학적 사유 관련 이미지 2

এই ছোট ছোট মুহূর্তগুলো উপভোগ করতে শিখলে আমাদের জীবনটা অনেক বেশি আনন্দময় হয়ে ওঠে।

প্রাচীন প্রজ্ঞা আধুনিক জীবনে এর প্রাসঙ্গিকতা আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা
প্রকৃতির সাথে একাত্ম হওয়া (তাওবাদ) মানসিক চাপ কমানো, মনোযোগ বৃদ্ধি, আত্মিক শান্তি লাভ। সকালে পার্কে হেঁটে আসা বা গাছের নিচে কিছুক্ষণ বসা আমার মনকে ভীষণ শান্ত করে তোলে।
নিয়ন্ত্রণযোগ্য বিষয়ে মনোযোগ (স্টোয়িক দর্শন) উদ্বেগ কমানো, মানসিক দৃঢ়তা বৃদ্ধি। যেসব বিষয় আমার নিয়ন্ত্রণে নেই, সেগুলো নিয়ে অযথা চিন্তা না করে যা করা সম্ভব তার ওপর ফোকাস করলে স্ট্রেস কমে।
কৃতজ্ঞতা চর্চা (ইসলামিক ও অন্যান্য দর্শন) ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলা, মানসিক প্রশান্তি বৃদ্ধি। কৃতজ্ঞতা ডায়েরি লেখা বা ছোট ছোট প্রাপ্তির জন্য সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানানো মনকে অনেক হালকা করে।
পর্যাপ্ত ঘুম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করা। নিয়মিত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া আমাকে সারাদিন সতেজ ও কর্মঠ রাখে।
সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখা একাকিত্ব দূর করা, মানসিক দৃঢ়তা বাড়ানো। বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সাথে মন খুলে কথা বলা বা আড্ডা দেওয়া মানসিক চাপ কমাতে দারুণ কাজ করে।

অশান্ত মনকে শান্ত করার সহজ উপায়

Advertisement

আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই এমন কিছু মুহূর্ত আসে যখন মনটা ভীষণ অস্থির হয়ে ওঠে। মনে হয় যেন সব কিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে, কোনো কিছুতেই আর শান্তি নেই। এই সময়গুলোতে আমরা অনেকেই দিশেহারা হয়ে পড়ি, বুঝতে পারি না কী করা উচিত। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা বলে, এই অস্থিরতার মাঝেও কিছু সহজ উপায় আছে, যা আমাদের মনকে শান্ত করতে সাহায্য করে। এই উপায়গুলো হয়তো খুব সহজ মনে হতে পারে, কিন্তু বিশ্বাস করুন, এগুলো দারুণ কার্যকর। প্রাচীনকালে ঋষি-মুনিরা যে জীবনধারা মেনে চলতেন, তার অনেক কিছুই আজও আমাদের জন্য অমূল্য। যেমন, নীরবতা। আমি নিজে যখন খুব দুশ্চিন্তায় থাকি, তখন একটু নিরিবিলি জায়গায় বসে চোখ বন্ধ করে শুধু নিজের শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে মনোযোগ দিই। এতে মনটা ধীরে ধীরে শান্ত হতে শুরু করে।

ধ্যান ও মননশীলতার অনুশীলন

ধ্যান বা মেডিটেশন শব্দটা শুনলেই অনেকে মনে করেন, এর জন্য হয়তো কঠিন কোনো যোগাসন বা গুরু-শিক্ষকের প্রয়োজন। কিন্তু আসলে তা নয়। ধ্যান মানে হলো বর্তমান মুহূর্তে মনোযোগ দেওয়া, নিজের মন আর শরীরের প্রতি সচেতন থাকা। আমি নিজে দেখেছি, প্রতিদিন সকালে মাত্র ১০-১৫ মিনিট যদি মন দিয়ে ধ্যান করা যায়, তাহলে সারাদিন মনটা অনেক শান্ত থাকে আর কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়ে। এর জন্য কোনো নির্দিষ্ট পদ্ধতির প্রয়োজন নেই, শুধু শান্ত পরিবেশে বসে নিজের শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে মনোযোগ দিলেই হয়। আজকাল অনেক ভালো ভালো অ্যাপস বা ইউটিউবে গাইডেড মেডিটেশন পাওয়া যায়, যা নতুনদের জন্য খুব উপকারী। চেষ্টা করে দেখুন, দেখবেন আপনার ভেতরের অস্থিরতা অনেকটাই কমে আসবে।

প্রযুক্তি থেকে সাময়িক বিরতি

প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ করেছে ঠিকই, কিন্তু এর অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের মানসিক শান্তি কেড়ে নিচ্ছে। আমরা সারাক্ষণ মোবাইল বা কম্পিউটারের স্ক্রিনে চোখ রাখি, সোশ্যাল মিডিয়ার পেছনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট করি, আর এসব করতে গিয়ে নিজেদের ভেতরের জগত থেকে দূরে সরে যাই। আমার মনে হয়, মাঝে মাঝে এই ডিজিটাল দুনিয়া থেকে একটু বিরতি নেওয়াটা খুব জরুরি। একে ‘ডিজিটাল ডিটক্স’ বলে। আমি নিজে দেখেছি, যখন আমি মোবাইল বা ল্যাপটপ থেকে কিছুটা দূরে থাকি, তখন চারপাশের পরিবেশটা আরও সুন্দর মনে হয়, পাখির গান আরও স্পষ্ট শোনা যায় আর নিজের ভেতরের চিন্তাগুলোও আরও পরিষ্কার হয়। দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে মোবাইল দূরে রেখে প্রিয়জনদের সাথে গল্প করুন বা নিজের পছন্দের কোনো কাজ করুন, দেখবেন মনটা কেমন সতেজ হয়ে ওঠে।

পরিবর্তিত জীবনে আত্মিক উন্নতির পথ

যুগের পর যুগ ধরে মানুষের জীবনধারায় অনেক পরিবর্তন এসেছে, কিন্তু আত্মিক শান্তির খোঁজটা আজও একই রকম রয়ে গেছে। প্রাচীন দর্শনগুলো এই আত্মিক উন্নতির পথ দেখিয়েছে, আর আধুনিক জীবনেও আমরা সেই পথ ধরে হাঁটতে পারি। আমার কাছে মনে হয়, আত্মিক উন্নতি মানে কেবল ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান নয়, বরং এটা নিজের ভেতরের সত্তাকে বোঝা, নিজের সীমাবদ্ধতাগুলো মেনে নেওয়া আর নিজেকে আরও ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা। এই পথে হাঁটতে গিয়ে আমি দেখেছি, ক্ষমা করা, অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া আর নিজের অহংকার ত্যাগ করা কতটা জরুরি। যখন আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করি, তখন আমাদের ভেতরের জগতটা আরও সুন্দর হয়ে ওঠে আর আমরা সত্যিকারের শান্তি অনুভব করতে পারি।

নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া

আমরা প্রায়ই অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হই, কিন্তু নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে ভুলে যাই। যখন আমরা কোনো ভুল করি বা কোনো ব্যর্থতার মুখোমুখি হই, তখন নিজেকেই দোষারোপ করি, নিজেদের প্রতি কঠোর হই। আমার মনে হয়, এই অভ্যাসটা আমাদের মানসিক শান্তি কেড়ে নেয়। নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া মানে হলো, নিজের ভুলগুলোকে মেনে নেওয়া, নিজেদের সীমাবদ্ধতাগুলোকে ভালোবাসা আর নিজেদের যত্ন নেওয়া। যখন আমি প্রথম বুঝতে পারি যে, নিজের প্রতি সদয় হওয়াটা কতটা জরুরি, তখন আমার জীবনটা অনেক সহজ মনে হয়েছিল। মনে রাখবেন, আপনি যেমন, তেমনই সুন্দর, আর নিজেকে ভালোবাসলেই আপনি অন্যদেরও ভালোবাসতে পারবেন।

জ্ঞান ও প্রজ্ঞার অন্বেষণ

জ্ঞানই শক্তি – এই কথাটা আমরা ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি। আর আমার মনে হয়, এই জ্ঞান অর্জনের পথটা কখনোই শেষ হয় না। প্রতিদিন নতুন কিছু শেখা, নতুন বই পড়া, বা নতুন কোনো অভিজ্ঞতা অর্জন করা – এই সবকিছুই আমাদের মনকে সমৃদ্ধ করে তোলে। প্রাচীন দর্শনগুলোও আমাদের জ্ঞান আর প্রজ্ঞার অন্বেষণে উদ্বুদ্ধ করে। আমি যখনই কোনো নতুন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করি, তখন আমার মনে হয় যেন নতুন একটা জগতের দরজা খুলে গেল। এই জ্ঞান আর প্রজ্ঞা আমাদের জীবনকে আরও অর্থপূর্ণ করে তোলে, আমাদের চিন্তাভাবনাকে গভীরতা দেয় আর আমাদের আত্মিক উন্নতিতে সাহায্য করে। তাই, প্রতিদিন কিছু না কিছু শেখার চেষ্টা করুন, দেখবেন আপনার জীবনটা অনেক বেশি আনন্দময় হয়ে উঠবে।আপনারা যারা এতক্ষণ ধৈর্য ধরে আমার লেখাটি পড়লেন, তাদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই আলোচনাগুলো আপনাদের ভেতরের শান্তি খুঁজে পেতে এবং জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করবে। আমরা যেন আমাদের এই ব্যস্ত জীবনে নিজেদের ভুলে না যাই, নিজেদের যত্ন নিই এবং প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে এক সুন্দর ও শান্তিময় জীবন গড়ি তুলতে পারি। মনে রাখবেন, সত্যিকারের সুখ আসলে আমাদের নিজেদের ভেতরেই লুকিয়ে আছে, শুধু তাকে খুঁজে বের করার জন্য আমাদের একটু চেষ্টা করতে হবে। আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করুন!

알아두면 쓸মো 있는 정보

১. প্রতিদিন অন্তত ১০-১৫ মিনিট নীরব পরিবেশে বসে মেডিটেশন বা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন। এটি আপনার মনকে শান্ত রাখতে এবং মানসিক চাপ কমাতে অসাধারণ কাজ করবে। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলে, এই ছোট অভ্যাসটি দিনের শুরুতেই আপনাকে অনেক বেশি সতেজ ও ইতিবাচক করে তুলবে, যা সারাদিনের কর্মদক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করবে।

২. মোবাইল ফোন ও সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে নিজেকে বাঁচান। ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে সব ধরনের ডিজিটাল ডিভাইস থেকে দূরে থাকুন। এর ফলে আপনার ঘুম ভালো হবে এবং সকালে ঘুম থেকে উঠলে আপনি আরও বেশি চাঙ্গা অনুভব করবেন। মাঝে মাঝে “ডিজিটাল ডিটক্স” অনুশীলন করা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী হতে পারে।

৩. প্রকৃতির সাথে সময় কাটানোর চেষ্টা করুন। প্রতিদিন অন্তত ২০ মিনিট কোনো পার্কে বা সবুজ পরিবেশে হাঁটাহাঁটি করুন। প্রকৃতির নিস্তব্ধতা এবং স্নিগ্ধতা আপনার ভেতরের অস্থিরতাকে শান্ত করতে সাহায্য করবে। আমার মনে হয়, প্রকৃতির কাছে গেলেই যেন মনের সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায় এবং একটা নতুন শক্তি পাওয়া যায়।

৪. আপনার প্রিয়জনদের সাথে মন খুলে কথা বলুন এবং তাদের সাথে সময় কাটান। পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সুসম্পর্ক মানসিক চাপ কমাতে এবং জীবনে আনন্দ বাড়াতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিজের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করা এবং অন্যের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে দারুণভাবে সাহায্য করবে।

৫. কৃতজ্ঞতার চর্চা করুন। প্রতিদিন ঘুমানোর আগে অন্তত তিনটি ভালো জিনিসের কথা ভাবুন যার জন্য আপনি কৃতজ্ঞ। এটি আপনার মনকে ইতিবাচক করে তুলবে এবং জীবনের ছোট ছোট আনন্দগুলো উপভোগ করতে শেখাবে। আমার মনে হয়, কৃতজ্ঞতা আমাদের ভেতরের জগতকে আলোকিত করে তোলে এবং হতাশা দূর করতে সাহায্য করে।

Advertisement

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির সারসংক্ষেপ

মনের শান্তি ও ভারসাম্য অর্জনে প্রধান ধাপসমূহ

আমাদের আধুনিক জীবন যত দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলুক না কেন, ভেতরের শান্তি আর ভারসাম্য খুঁজে বের করাটা আজও সমানভাবে জরুরি। আমি দেখেছি, এই শান্তি কোনো বাইরের বস্তুগত বিষয় থেকে আসে না, বরং তা আসে নিজেদের ভেতরের জগতকে বোঝার এবং তার যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে। প্রাচীন দর্শনগুলো, যেমন তাওবাদ বা স্টোয়িক প্রজ্ঞা, আমাদের এই পথেই চলতে শেখায় – কীভাবে প্রকৃতির সাথে একাত্ম হওয়া যায়, কীভাবে নিজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা বিষয়গুলো নিয়ে অযথা চিন্তা না করে বর্তমানকে উপভোগ করা যায়। এই পথে হাঁটলে আমরা শুধু মানসিকভাবেই সুস্থ থাকি না, বরং আমাদের সামগ্রিক জীবনযাত্রাও উন্নত হয়।

শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক

একটি সুস্থ শরীর ছাড়া একটি সুস্থ মন আশা করা যায় না। পর্যাপ্ত ঘুম, পুষ্টিকর খাবার এবং নিয়মিত শরীরচর্চা আমাদের শারীরিক ও মানসিক উভয় সুস্থতার জন্যই অপরিহার্য। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, যখন আমি এই তিনটি বিষয়ের দিকে মনোযোগ দিই, তখন আমার কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়ে, ক্লান্তি কমে এবং মেজাজ ফুরফুরে থাকে। এছাড়াও, ডিজিটাল দুনিয়া থেকে মাঝে মাঝে বিরতি নেওয়া এবং প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়া আমাদের মনকে নতুন করে সতেজ করে তোলে। এই ছোট ছোট পরিবর্তনগুলো আমাদের জীবনকে আরও অর্থপূর্ণ এবং শান্তিময় করে তুলতে পারে।

আত্মিক উন্নতি ও সম্পর্কের গুরুত্ব

মানুষ হিসেবে আমাদের আত্মিক উন্নতির দিকেও খেয়াল রাখা উচিত। ক্ষমা করা, সহানুভূতিশীল হওয়া এবং নতুন কিছু শেখার আগ্রহ রাখা আমাদের ভেতরের জগতকে সমৃদ্ধ করে। একই সাথে, পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। নিজের অনুভূতিগুলো ভাগ করে নেওয়া এবং অন্যদের কথা শোনা একাকীত্ব দূর করে এবং মানসিক দৃঢ়তা বাড়ায়। মনে রাখবেন, সত্যিকারের সুখ আমাদের চারপাশের মানুষ, প্রকৃতি এবং আমাদের নিজেদের ভেতরের সম্পর্কের মধ্যেই নিহিত।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) 📖

প্র: তাওবাদ আসলে কী এবং কীভাবে এটি আমাদের বর্তমান জীবনের চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে?

উ: আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, তাওবাদ মানে শুধু একটা পুরোনো দর্শন নয়, এটা আসলে জীবনকে দেখার একটা দৃষ্টিভঙ্গি। এর মূল কথা হলো প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে চলা, সরলতা আর সহজিয়া জীবনযাপন। আমরা আজকাল এত অস্থির থাকি, কারণ আমরা সবসময় কিছু পাওয়ার পেছনে ছুটি, আমাদের মন সবসময় “বেশি চাই” মন্ত্র জপ করে। তাওবাদ শেখায়, জোর করে কিছু না করে স্বাভাবিক স্রোতে গা ভাসাতে, যেটাকে “উই ওয়েই” (Wu Wei) বলে। যখন আমি খুব চাপে থাকি, তখন মনে হয় যেন একটা গহীন বনে আছি, যেখানে সব নিয়মকানুন প্রকৃতির হাতে। সেই অনুভূতিটা নিজের জীবনে আনলে দেখি, অযথা দুশ্চিন্তা অনেক কমে যায়। এই দর্শন শেখায় যে, জীবনের সব সমস্যার উত্তর বাইরে নয়, আমাদের ভেতরেই আছে। বাইরের কোলাহল যখন অসহ্য লাগে, তখন প্রকৃতির শান্ত রূপটা মনে করলে বা কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে নিজের শ্বাস-প্রশ্বাস খেয়াল করলে মনটা কেমন হালকা হয়ে যায়, তাই না?
তাওবাদ আসলে শেখায়, কিভাবে নিজেকে খুঁজে পেতে হয়, কিভাবে বাইরের গোলমালের মধ্যেও নিজের ভেতরের শান্তিটাকে ধরে রাখতে হয়।

প্র: এত আধুনিকতার ভিড়ে, প্রযুক্তির এই যুগে আমরা কিভাবে এই প্রাচীন দর্শনগুলোকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগাবো?

উ: এই প্রশ্নটা আমারও মাথায় আসে যখন দেখি চারিদিকে শুধু স্মার্টফোন আর ইন্টারনেটের দৌরাত্ম্য। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, এই দর্শনগুলো আজকের যুগে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। ধরুন, তাওবাদ সরলতার কথা বলে। আমরা কি পারি না আমাদের ডিজিটাল জীবনটাকে একটু সরল করতে?
অপ্রয়োজনীয় নোটিফিকেশন বন্ধ করে, বা দিনে কিছুক্ষণ ফোন থেকে দূরে থেকে। আমি নিজে চেষ্টা করি দিনে অন্তত এক ঘণ্টা কোনো স্ক্রিন না দেখতে। প্রথম প্রথম খুব কঠিন মনে হতো, কিন্তু এখন দেখি, ওই সময়টুকুতে আমার মন যেন একটা গভীর শ্বাস নিতে পারে। এরপর কাজ করার সময় মনোযোগও বাড়ে। এছাড়া, প্রকৃতির সাথে সংযোগের কথা তাওবাদ বারবার বলে। শহরে থাকলেও আমরা কি সকালে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় দেখতে পারি না?
কিংবা রাতে আকাশের তারা গুনতে পারি না? এতে মনটা কেমন শান্ত হয়ে যায়। এটা আসলে শুধু শারীরিক উপস্থিতি নয়, মানসিকভাবে প্রকৃতির সাথে জুড়ে থাকা। যখন দেখি কোনো গাছ নিজের মতো বাড়ছে, তখন মনে হয়, আমারও তো এই প্রকৃতিরই অংশ, এত দৌড়ঝাঁপ কিসের?

প্র: এই দার্শনিক চিন্তাগুলো নিয়ে যাত্রা শুরু করার জন্য কিছু সহজ উপায় বা প্রথম পদক্ষেপ কী হতে পারে?

উ: আমার মনে হয়, কোনো বড় পরিবর্তনের জন্য প্রথমেই হিমশিম খাওয়ার দরকার নেই। ছোট ছোট পদক্ষেপ দিয়ে শুরু করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। যেমন, সকালে ঘুম থেকে উঠে তাড়াহুড়ো না করে পাঁচ মিনিট চুপচাপ বসে থাকুন। আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে মনোযোগ দিন। এটা এক ধরনের মেডিটেশন। আমি নিজে যখন এটা শুরু করেছিলাম, প্রথম প্রথম মন স্থির থাকতো না, কিন্তু ধীরে ধীরে দেখলাম, এটা আমার দিনের শুরুটাকেই শান্ত করে দেয়। দ্বিতীয়ত, প্রকৃতির সাথে একটু সময় কাটান। পার্কে হাঁটতে যান, গাছের পাতায় হাত বুলিয়ে দেখুন, পাখির ডাক শুনুন। আমার একটা প্রিয় কাজ হলো, সকালে যখন চা খাই, তখন বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাইরের দুনিয়াটাকে চুপচাপ কিছুক্ষণ দেখা। এতে মনে হয় যেন প্রকৃতির সাথে আমার একটা গভীর সংযোগ তৈরি হচ্ছে। আর একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, নিজের উপর থেকে চাপ কমানো। সব কাজ পারফেক্ট হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। নিজের ভুলগুলোকেও মেনে নিতে শিখুন। দেখবেন, জীবনটা অনেক সহজ মনে হবে। মনে রাখবেন, এই যাত্রাটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত, আর তাই নিজের গতিতে, নিজের মতো করে এগিয়ে যাওয়াটাই আসল।